বিগতের পরিণতিতেই থাকে বর্তমান আর বর্তমানে দাঁড়িয়েই ঘোষিত হয় ভবিষ্যতের কর্মদিশা!
উদয় আর অস্ত সত্য হলেও তা কেবল ভূমিজ ক্ষেত্রে স্থানিক সত্য মাত্র! কারণ আজকের মানুষ জানে, সূর্য ওঠেও না-ডোবেও না, বরং পৃথিবীটাই ঘুরছে। যেকোনো দেশের যুদ্ধই আজ বিশ্বযুদ্ধের শংকায় ত্রস্ত করে প্রতিটি মানুষকে কারণ প্রত্যেক মানুষই আজ বৈশ্বিক- বিজ্ঞানকে প্রণিধান করেই পৃথিবী আজ অখন্ড। বহু পূর্বেই বাংলার এই অনার্য ভূমিপূত্ররা পৃথিবীকে বসুমাতা হিসেবে জানে। ধরিত্রী অর্থেই প্রকৃতি, প্রত্যেক মানুষই প্রকৃতির সন্তান- আমাদের সহোদর। তাই আমাদের কন্ঠে খুব সহজেই আধুনিক পৃথিবীর শেষ সিদ্ধান্তটা প্রতিধ্বনিত হয় আদি শব্দে- ‘প্রত্যেক মানুষের বাঁচার জন্যে একটিই পৃথিবী’।
বর্তমান দুনিয়ার প্রতিটি প্রান্তই প্রতিটি মানুষের জন্যে এবং প্রতিটি মানুষ স্বকীয়, স্বতন্ত্র বলেই সমগ্র পৃথিবীর জন্যে প্রত্যেক মানুষই আজ অনিবার্য- যেখানে ধর্মের বিকল্প থাকলেও মানুষের বিকল্প কেবল মানুষই!
আমি যে জনপদেরই হই মানুষ হিসেবে তাই বিগতের পদপ্রান্তে দাঁড়িয়ে সমাগত নতুন বছরের শুভকামনা- পৃথিবীর প্রত্যেক মানুষকে।
প্রযুক্তিগত উত্তরণ সাজুয্যতায় আজ যেমন সবাইকে জানানো যায়, তেমনি কেউ না চাইলেও সমাজবদ্ধ বর্তমানের মানুষ তা জেনে যায়। আজকের বাস্তবতায় যা মিথ্যা তা প্রকাশ পাবে, আর সে কারনেই যা সত্য ও ন্যায় তার প্রতিষ্ঠা হবে; কার্যত মিথ্যা তো দূরীভূত হওয়ারই থাকে। কারন- ‘পৃথিবী এখন গাঁয়ের চেয়েও ছোট’!
প্রকৃতিগতভাবে প্রতিটি মানুষ স্বকীয় এবং তার বোধ ও মতের এই স্বীকৃতিটুকুই মানবীয় মর্যাদার শ্রেষ্ঠ দাবি। শাসনব্যবস্থার ইতিহাসে এই দাবির রাজনৈতিক পরিণতিই হলো গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা। ঠিক যেমন ’৫২ এর ভাষা আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিণতিতেই ’৭১ এর স্বাধীনতা কিংবা বোধগত প্রত্যয়ে খোদিত ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’- অক্ষয় সে দাবির স্মারকে প্রতিষ্ঠিত ৯০ পরবর্তী আজকের গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ।
এই দেশ ও তার মানুষ আপন ভাষার দাবিতেই স্বাধীন হয়েছে, গণতন্ত্রের দাবিতে নিজেকেই পোস্টার করেছে এভাবেই স্বাধীন এ দেশটি অবশেষে গণতান্ত্রিক বিশ্বের সহযাত্রী হয়েছিল। মত প্রকাশে মুখের ভাষা আর বোধ প্রকাশে নিজেকেই পোস্টার করা- বোধ আর মত প্রকাশের বৈশ্বিক ইতিহাসে অনবদ্য সেই দেশেই ৩০শে ডিসেম্বর- ২০১৮ একাদশ সংসদ নির্বাচন! স্তম্ভিত দেশ- বিস্ময়ে বিমূঢ় গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের ইতিহাস!!
বৈশ্বিক বোধে আইলান কুর্দির চোখ আর লাখো রোহিঙ্গার যন্ত্রণা নিয়েও তাকিয়ে আছি সেই বুলেট বিদ্ধ লাশটির দিকে যাঁর বুকে/পিঠে লেখা ছিল ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক’ সেই আঁধবোজা চোখ এখনও তাড়া করছে . . . .
অতএব ৭১’র মাওজার এখনও যাঁদের পূর্ব পুরুষদের হাড়-গোড় ফাঁক ফোঁকর গলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে অথবা উত্তর পুরুষ শিয়রে দাঁড়িয়ে এখনও বলে ‘লাব্বাইক’! এই মাটিতেই বেড়ে বলে উঠা সেই মানুষগুলো নিশ্চয় আজ বলবে, “Hold your tongue, let me love my Country, my Independence and my Democracy”।
ষোল কোটি মানুষের ভোটাধিকার হারানোর এক বছর অতিক্রান্ত। অতঃপর অশ্রুক্রোধ আর প্রতিরোধের দুর্দমনীয় ভালোবাসা নিয়েই- সুস্বাগতম ২০২০ খ্রিস্টাব্দ।