১৯৫০ সালে রাজশাহীর খাপড়াছড়ি ওয়ার্ডে বাঙ্গালী রাজবন্দীদের উপর গুলি দিয়ে শুরু, অতঃপর ৫২র ভাষা আন্দোলন ৬ দফা থেকে ৭০ হয়ে ৭ই মার্চের প্রতিরোধী উচ্চারণ এবং সশস্ত্র প্রতিধ্বনিতে ২৬শে মার্চ বঙ্গীয় অস্তিত্বের সদম্ভ ঘোষণায় ১৭ই এপ্রিল বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে বাংলার শাসন নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা নিজেদের হাতে তুলে নেয় স্বাধীন বাংলার প্রথম সরকার এবং তা কেবল প্রথম সরকার নয় বরং দল মত নির্বিশেষ জাতীয় সরকার ছিল সেটি।
১৭৫৭ সালের ২৩শে জুন, পলাশীর এমনি এক আম্রকাননে- বাংলার শাসন নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা দেশীয় ষড়যন্ত্র আর বিদেশী চাতুর্যতায় হাতছাড়া হয়েছিল; সারগতভাবে সমগ্র ভারতবর্ষেরও স্বাধীনতার সূর্যাস্তের দিন ছিল সেটি অতঃপর দীর্ঘ আঁধার পথে ১৯৩০ সালে তিনদিনের জন্যে হলেও সমগ্র ভারতবর্ষের স্বাধীনতার প্রথম সূর্যোদয় ঘটে এই বাংলাতেই এবং তা মাস্টারদা সূর্যসেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রামে।
জাতীয় রাজনীতি ও তার দীর্ঘ পথ চলার পরিণতিতেই প্রায় ২১৪ বছর পর, ১৭ই এপ্রিল, ১৯৭১ সালে ইতিহাসের পরম্পরায় অশ্রু-ক্রোধ-ভালোবাসায় বঙ্গ হৃদয় এদিন কেঁদেছিল। আর কাঁদতে কাঁদতেই যেন ইতিহাসের চাকা দোর্দন্ড- প্রতাপে নিজেদের জয়ের দিকে টেনে ধরেছিল।
আপন ভূমিতে প্রায় নয় মাসের রক্তাক্ত যুদ্ধে ৩০ লক্ষ মানুষের তাজা প্রাণ আর ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রম হারিয়ে বৈশ্বিক রাজনীতির ময়দানে কূটনৈতিক জঙ্ঘ জিতে- ১৬ই ডিসেম্বর, ১৯৭১ জাতীয় সরকারের নেতৃত্বেই পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নিজের স্বাধীন সার্বভৌম অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠা করে- সবুজ ঘেরা সূর্যস্পর্শিত রক্ত স্মারক-এর স্পর্ধিত পতাকা হাতে নিজের বিজয় ঘোষণা করে।
প্রসঙ্গতঃ এই উপমহাদেশে ‘স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ’ই একমাত্র দেশ- যে দেশটি কোন গভর্নর জেনারেলের (লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন) আদেশ বলে জন্ম নেয়নি বরং তা জাতীয় রাজনীতির পরিণতি অর্থেই অর্জিত হয়েছে।
স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর, জাতীয় রাজনীতির মর্যাদায় অঙ্কিত সেই পতাকা ও তার রক্ত স্মারকে সংবদ্ধ হয়ে উঠুক আমাদের জাতীয় রাজনীতি- যা হবে আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে যথার্থই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের রাজনীতি। মহান বিজয় দিবসে এবার সেই বোধটাই উন্মোচিত হোক।
মুক্তিজোটের পক্ষ থেকে বিজয়ের এই দিনে পৃথিবীর সব মানুষকে শুভেচ্ছা।