স্মৃতিহত্যা গণহত্যার মতই জঘণ্য। ১৯৭১ সালে বুদ্ধিজীবী হত্যার পৈশাচিকতা এ দেশ কখনও ভুলবে না, তাই ৪৫ বছর যাবৎ সর্বস্তরের মানুষ ১৪ই ডিসেম্বর রাস্তায় নেমে আসে। কেবল রায়ের বাজার বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ নয় বরং সে শোকের মাতম কালো ব্যাণ্ডেজ- এর স্মারক হয়ে সমগ্র দেশজুড়ে সবার বুকে বুকে ছড়িয়ে পড়ে। যদিও অনতিকাল পরেই সে শোক অশ্রু-ক্রোধে ১৬ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের আনন্দ হয়ে ফিরে আসে, তবুও বেদনাটুকু যেন রয়েই যায়; অতঃপর অসংখ্য মৃত্যু ও রক্তদামে অর্জিত লাল-সবুজের সার্বভৌম নিশানকে সে স্যালুট করে- অশ্রু মোছে। এভাবে ১৪ই ডিসেম্বরসহ সব শহীদানের সওগাত আমার পতাকায় ভাসে।
পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী দ্বারা নৃশংস গণহত্যার সাথে বেছে বেছে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা কেবল তাদের নারকীয় পৈশাচিকতার নতুন মাত্রা ভাবলে ভুল হবে বরং আমাদের বিজয় নিশ্চিত হওয়ার পর তা ঘটানো হয়েছিল বলে, ভবিষ্যৎ জাতীয় জীবন প্রাসঙ্গিকতায় এটা তাদের জঘণ্য পরিকল্পনাকেই নিশ্চিত করে।
এক্ষেত্রে পাকিস্তানী গোষ্ঠীর সাথে পাকিস্তানী রাষ্ট্রশক্তির মিলিত পরিকল্পনারই দিক ছিল সেটা- তাই আজ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত শ্রদ্ধার সাথে চাই রাষ্ট্রীয় ভূমিকা। এটা কেবল শ্রদ্ধা-মর্যাদার বিষয় নয়- উত্তর প্রজন্মের স্বার্থে তা রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের অন্তর্গত। রাষ্ট্রীয়ভাবে জাতীয় দিনটিকে যদি প্রাতিষ্ঠানিকতায় নিশ্চিত না করা হয় তবে তা হবে স্মৃতিহত্যার অপরাধ। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ ও তার সরকার হিসেবে আমরা নিশ্চয়ই পাকিস্তানী রাষ্ট্রজান্তার উত্তরাধিকার এর পর্যায়ে নিজেদেরকে নামিয়ে দিতে ঘৃণা বোধ করি।
সংগত কারণেই অবিলম্বে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসকে রাষ্ট্রীয় ছুটি ঘোষণা করা হোক।